গতকাল সারাদিনে দেশের ৬ জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ময়মনসিংহে বাস-সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ সাতজন, বগুড়ায় তিনজন, জামালপুরে দুইজন, মৌলভীবাজারে তিনজন, ফরিদপুরে একজন ও চুয়াডাঙ্গায় একজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন সময় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- ময়মনসিংহে বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সাত যাত্রী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদীয়া ইউনিয়নের চরবড়বিলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদর মধ্যে চারজনের পরিচয় মিলেছে। যাদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের সদস্য। নিহতরা হলেন- ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুরের আশাবট গ্রামের বাবলু আহমেদ (৪৫), তার স্ত্রী শিলা আক্তার (৩৫), তাদের ছেলে মো. সাদমান (৭) এবং একই উপজেলার অটোরিকশা চালক আলামিন সরকার (২৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুলপুর থেকে ছেড়ে আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি একটি গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে শেরপুরগামী আদিল পরিবহনের একটি বাসের সামনে পড়ে যায়। এ সময় বাসচাপায় অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে অটোরিকশায় থাকা স্বামী-স্ত্রী ও সাত বছরের ছেলেসহ সাত যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এ সময় ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকায় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে, তবে চালক পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।
বগুড়া- বগুড়ার শাজাহানপুরে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই ট্রাকের চালক ও সহকারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। সকালে উপজেলার নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের বীরগ্রাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, বালুবাহী একটি ট্রাক বগুড়া থেকে নাটোরে যাচ্ছিল। পথে বীরগ্রামে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা কুড়িগ্রামগামী একটি কয়লাবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ট্রাকের চালক ও এক হেলপার নিহত হন।
মৌলভীবাজার- মৌলভীবাজারের রাজনগরে সিএনজিচালিত দুটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। আহত হয়েছেন চারজন। বিকেল ৪টায় মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ময়নার দোকান এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নম্বরবিহীন দুটি অটোরিকশার একটি রাজনগরের দাশটিলা থেকে তারাপাশা এলাকায় ও অপরটি কলেজ পয়েন্ট থেকে দাশটিলা গ্রামে যাচ্ছিল। পথে উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ময়নার দোকান এলাকায় পৌঁছালে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে একজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুজন মারা যান।
জামালপুর- জামালপুরে ক্রিকেট খেলে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর কাচারিপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছে- শাহবাজপুর কাচারিপাড়া এলাকার সোহেল রানার ছেলে মো. কাঁকন মিয়া (১৬), এবং শারিফপুর ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি ঠিকাদার বাড়ি এলাকার মো. সুমন মিয়ার ছেলে সিনহাদ (১৬)। তারা দুইজনেই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দুই বন্ধু মিলে ক্রিকেট খেলে। খেলা শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিল তারা। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই কাকনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় লোকজন সিনহাদকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এদিকে শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
ফরিদপুর- ফরিদপুরের নগরকান্দায় বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রবিউল ইসলাম (২৪) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সংঘর্ষে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার তালমা মোড়ের মাশাউজান এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নগরকান্দা ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
চুয়াডাঙ্গা- চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় দ্রুতগতির পিকনিকের বাসের ধাক্কায় মফিজ উদ্দিন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের তালসারি মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মফিজ উদ্দিন দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদহ ইউনিয়নের চন্দ্রবাস গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনার পর পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থেকে বাসটি আটক করে হেফাজতে নিয়েছে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ। তবে চালক পলাতক রয়েছেন।
দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক আলমগীর কবীর বলেন, বাসটি মুজিবনগর থেকে আটক করা হলেও চালক পলাতক রয়েছেন। সাতক্ষীরা থেকে মুজিবনগরে পিকনিকের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল বাসটি। মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে আছে। পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই বলে জেনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।